Header Ads

Header ADS

অপেক্ষা

নাদিম আজ পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে, হালকা নীল রঙের , ভালোই মানিয়েছে তাকে, আজ ঐশীর সাথে দেখা করতে এসেছে হাতে রেপিং পেপার দিয়ে মোড়ানো কি যেন আছে, মনে হয় ঐশীর জন্যই এনেছে। আজ তাদের সাময়িক সময়ের জন্য শেষ দেখা,




নাদিম ঘড়ির দিকে তাকালো ১৫ মিনিট ধরে বসে আছে এখনো ঐশীর দেখা নেই এটা ভাবতে না ভাবতেই কে যেন পেছন থেকে তার চোখ ধরল, হাতের ছোয়াটা এত নরম ছিল যেন তুলোর হাত, নাদিমের বুঝতে বাকি রইল না যে এটা ঐশীর হাত , সে হাত দুটো দু হাত দিয়ে স্পর্শ করে চোখ থেকে নামিয়ে পেছনে তাকাতেই মূর্তির মত শক্ত হয়ে গেল। ঐশী আজ শাড়ি পরে এসেছে, হালকা নীল রঙের শাড়ি, যেন আকাশ থেকে পরী নেমে এসেছে,এত মায়াবী চেহারা যেন সে আজ প্রথম দেখলো, দুজনের জামার রং একদম একই,, কিন্তু কেউ জানতো না কে কিরকম রঙের জামা পরে আসবে। পুরোটাই কাকতালীয়ভাবে মিলে গেল।
নাদিম ঐশীর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে, ওমনি ঐশী বলে উঠলো,

  • "এই, কি হলো? কি দেখছো এভাবে? চোখ এত বড় বড় করে আছ কেন যেন রাক্ষস দেখছো..!! " নাদিমের এতক্ষণ পর হুশ এলো, লজ্জা পেয়ে গেল বোধহয় একটু,
  • " আজ হঠাৎ শাড়ি পরে এলে?"
  • "কেন? পড়তে কি পারি না?"
  • "না। পারবে না কেন? এর আগে তো অনেক বার বলেছিলাম পড়তে কখনো পড়লে না, তাই আজ একটু অবাক লাগছে। "
ঐশী বলল, " আচ্ছা, তুমি অস্ট্রেলিয়া থেকে কবে ফিরবে?" নাদিম দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল, "এই ৪ বছর পর হয়তো...!! "
ঐশীর মনটা খারাপ হয়েছে একটু বুঝতে পারলো নাদিম, " গ্র্যাজুয়েশনটা করেই চলে আসব" ঐশী তখনো কিছু বলল না, " চলো না ঐদিকটা হাটি" এটা বলেই নাদিম তার হাত ধরে টেনে তুলল। ঐশী কিছু না বলেই হাঁটতে লাগলো নাদিমের হাত ধরে, নাদিম শক্ত করে ধরে রেখেছে তুলোর মত হাতগুলো যেন সে তুলোই ধরে রেখেছে।
রহিম মামার ফুচকাটা অসাধারণ। নাদিম ঐশী প্রতিবার এখানে আসলে মামার ফুচকাটা খাবেই এটা ফিক্সড করা একদম। তোমার হাতে এটা কি? ফুচকা খেতে খেতে ঐশী জিজ্ঞাসা করল। ওহ! ভুলেই গিয়েছিলাম, এটা তোমার জন্য। কী এটা? ঐশীর কৌতূহলী প্রশ্ন।
নাদিম কিছু বলার আগেই সে তাড়াতাড়ি ফুচকা রেখে রেপিং পেপার খুলতে লাগলো, একটা ডায়েরি। ডালটা বেশ সুন্দর ,কাঠের তৈরি উপরে নকশা করা ,
" ডায়েরি? কি মনে করে? "
"এমনি..!! আমার চলে যাওয়ার পর এটাতে আমাকে চিঠি লিখবে প্রতিদিন, আমি এসে ফেরত নিব কিন্তু তারপর সব পড়ব," ঐশী হাসতে লাগলো। তার হাসিটা যেন মাতাল করা হাসি, হাসির সাথে যেন মুক্ত ছড়াচ্ছে, এত মায়াবী হাসি যেন পুরো পৃথিবীতে খুব কম মানুষেরই হয়।



নাদিম বসে আছে ,একটু পর তার ফ্লাইট। সে তার বাবা মাকে সালাম করে নিল, ছোট বোনকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিল। ফ্লাইটে যাওয়ার আগেই ঐশীর সাথে ফোনে কথা বলে নিল। অবশেষে সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল সে। আজ ৮ টা বছর কেটে গেল। ঐশী এর মধ্যে অনেকগুলো ডায়েরি শেষ করে ফেলেছে চিঠি লিখে। ভাবতে লাগলো ফিরে এসে এতগুলো ডায়েরি কিভাবে পড়ে শেষ করবে নাদিম? আদৌ কি সে ফিরে আসবে? ৪ বছর তো সে কবেই ফুরিয়ে গেল..!! কেন এখনো ফিরলো না? প্রতিদিন এই প্রশ্নগুলো সে করেই যায় নিজেকে কিন্তু উত্তর যে সে পায় না।

প্রতিটি চিঠির পাতায় তার চোখের পানি মিশে আছে, আচ্ছা..!! নাদিম কি সেই মিশে থাকা চোখের পানি গুলো দেখবে ডায়েরির পাতায়? বিয়ে করেনি ঐশী, অপেক্ষায় আছে সে, এই ভেবে যে একদিন তো নিশ্চয়ই আসবে তার ভালোবাসার মানুষটা, নিশ্চয়ই আসবে।

                                         


অপেক্ষা জিনিসটা খুবই স্বার্থপর, কখনো আশার ছোট্টো আলোটাকে দেখতে দেয় না, মানুষ ছোট্ট আশার আলোর জন্য যে কি পরিমাণ ব্যাকুল হয়ে উঠে তা সে বোঝে না, অপেক্ষা বড়ই স্বার্থপর..!!!!




ধন্যবাদ


2 comments:

  1. Nice story written by ahmed shobair, i am just inpressed to read it

    ReplyDelete
  2. Thanks a lot for you wonderful comment.❤

    ReplyDelete

Powered by Blogger.