বিয়ে আগে নাকি লেখাপড়া?
যদি কেউ আমায় জিজ্ঞাসা করে, ভাইয়া! আপনার দৃষ্টিতে বিয়ে আগে নাকি লেখাপড়া?
আমার উত্তর হবে খুব সহজ এবং একটু যোক্তিক "আপনি সর্বপ্রথম ইসলাম কি বলতে চাই সেটা আগে জেনে নিন নিচের আলোচনায় তারপর আশা করি আমার উত্তরটাও সেখানে পেয়ে যাবেন"
[ক]
আপনার বিয়ে করতে খুব ইচ্ছে করতেছে । কিন্তু আপনি এখনো ছাত্র। লেখাপড়া করতেছেন বিধায় বাড়ি থেকে আপনার বিয়ে দিচ্ছে না । তাহলে এই মূহুর্তে আপনার করণীয় কি?? বিয়ে করবেন না কি পড়ালেখা করবেন?? আসুন তাহলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করি । মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণের শরীয়ত সম্মত পন্থা হলো বিবাহ। এর দ্বারা মানব জীবন পূর্ণতা লাভ করে এবং পবিত্র পন্থায় মানব বংশ বিস্তার ঘটে । আল্লাহ প্রদত্ত এ বিধান মানুষকে সামাজিক পাপাচারকে থেকে নিষ্কৃতি দান করে এবং পবিত্র ও আদর্শ জীবন যাপনে উৎসাহিত করে । বিয়ে করার হুকুম হলো ফরজে আইন । এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন - " তোমরা তোমাদের মহিলাদের মধ্য থেকে বিয়ে করো " আল্লাহর হুকুম হলো বিয়ে করতেই হবে । রাসূল সা. বলেছেন - " বিয়ে করা আমার সুন্নাত । যে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভূক্ত নয় " সুতরাং উপরিউক্ত হাদীস থেকে পরিস্কার ভাবে জানা যায় বিয়ে করতেই হবে । কিন্তু কখন বিয়ে করতে হবে?? এ ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা এবং শাফেয়ী রহ. এর অভিমত - -যদি প্রেমপ্রবণতা তীব্র আকার ধারণ করে, বিবাহ না করলে যিনায় লিপ্ত হওয়ার আশঙ্খা থাকে তবে, মহর ও নাফাকাহ দেয়ার ক্ষমতা থাকে তাহলে তার জন্য বিবাহ করা ফরজ । আর স্বাভাবিক অবস্থায় বিবাহ জায়েজ । আর বিয়ে করার সামর্থ না থাকলে রোজা রাখতে হবে ।[খ]
স্বাভাবিক ভাবেই ১৮ বছর বয়স হলেই ছেলেদের প্রতি মেয়েদের এবং মেয়েদের প্রতি ছেলেদের আকর্ষণ বেড়ে যায় । যার ফলে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়ে যায় প্রেম প্রীতি আর ভালোবাসা । এই কঠিন মূহুর্তে অনেকেই হারাম রিলেশনে জড়িয়ে পড়ে । হাতে হাত রেখে ঘুরতে যাওয়া, এক সাথে গল্প করা । যা শরীয়তে একদম হারাম । এরকম করতে করতে এক পর্যায় ছেলে-মেয়ে উভয়ই মিলে অবৈধ কাজে ঝাপিয়ে পড়ে । যা ইসলাম কখনোই গ্রহণ করে না । তাহলে একবার নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন তো এরকম অবৈধ সম্পর্ক করা ভালো নাকি বৈধভাবে বিয়ে করা ভালো?? অনেক পিতাই বলে ছাত্রজীবনে বিয়ে করলে পড়ালেখার ক্ষতি হবে । পড়ায় মন বসবে না । সেই সব পিতার উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই - ছাত্র জীবনে বিয়ে করলে পড়ালেখায় ক্ষতি হবে না বরং আরো দ্বিগুণ পড়ালেখায় উন্নতি সাধন হবে । কারণ বিয়ের পর প্রিয়তমার অনুপ্রেরণায় অনুপ্রেরিত হয়ে একজন দূর্বল ছাত্রও ভালো কিছু করতে পারবে। এটা আমার কথা নয়, এটা আমাদের ইসলাম আমাদের শিখায়। ছাত্র বয়সে বিয়ে করার আগ্রহ প্রবল আকার ধারণ করে । সারাক্ষণ মাথায় ঘুরঘুর করে - " যদি পাশে তার জীবনসঙ্গিনী থাকতো " এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়, একটি পুরুষের জীবনকালে এমন একটি আগ্রহ জন্মানটা কাকতালীয় ব্যাপার নয়। কিন্তু অধিকাংশ পিতা-মাতা ছেলেমেয়েদের এই অব্যক্ত মনের ইচ্ছাটা বুঝতে অক্ষম হয় । যার ফলে ছেলেমেয়েরা নানা ধরণের ফেতনায় জড়িয়ে পড়ে ।[গ]
আগে বিয়ে নাকি আগে পড়ালেখা?? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো আগে বিয়ে তারপর পড়ালেখা । কারণ বিয়ে করলে বেগানা নারীদের নজর থেকে হেফাজত হওয়া যায় । অবৈধ সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা যায় । বিয়ে করার পরও কিন্তু স্ত্রীকে বাপের বাড়িতে রেখে পড়ালেখা করা যায় । এতে সমস্ত প্রকার ফেতনা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব । আমার এক উস্তাদ বলেছেন - " বাবারা তোমরা ছাত্র বয়সেই বিয়ে করবা । কারণ, ছাত্র বয়সে বিয়ে করলে মন ও মস্তিষ্ক স্বাভাবিক থাকে । নানা ধরণের ফেতনা থেকে হেফাজত থাকা যায় " উস্তাদরে জিজ্ঞেস করলাম - - আচ্ছা আমরা তো এখনো ছাত্র । আর এই সময় বিয়ে করলে বউকে খাওয়াবো কি? প্রশ্নের উত্তরে তিনি হাসি দিয়ে বললেন - বাবা! বিয়ে করো। তারপর দেখবা বউয়ের পরশে থাকার পর এমনিতেই নিজেকে কাজ কর্ম করতে মন চাইবে । আসলেই তো....... ছাত্র বয়সে বিয়ে করলে জৈবিক চাহিদাও পূরণ হবে এবং পড়ালেখাও ভালো হবে । সুতরাং সামর্থ থাকলে ছাত্র বয়সেই বিয়ে করা উত্তম ।[ঘ]
আবার অনেক বোনদের প্রশ্ন, পড়ালেখা করে কি লাভ বিয়ে তো করতে হবে । স্বামীর ঘরে তো যেতেই হবে ।
বোন! আপনাদের পড়ালেখা করা একান্ত জরুরী। কারণ আপনাদের হাতের গড়ে উঠবে আগামী প্রজন্ম । আপনাদের সন্তানসন্ততি যখন হবে তখন তাদের পড়ালেখার দায়িত্ব কিন্তু আপনাকেই নিতে হবে ।
এজন্য নেপোলিয়ান বলেছেন -
" আমাকে একটা শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দিবো "
তিনি একথা বলার কারণ হলো - শিক্ষিত মায়ের হাতেই একটা শিক্ষিত প্রজন্মের আগমণ ।
-বোন! বিয়ে করার পরও সংসার চলাকালিন পড়ালেখা করা সম্ভব । সারাদিনে একটু সময় করে ঐসময়ে পড়ালেখা করা যায় । সংসারও চলবে পড়ালেখাও চলবে । এখন অনেকেই বলবে - সংসার করতে গেলে পড়ালেখা করা সম্ভব হবে না । তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো -
বোন! ইচ্ছা করলে অবশ্যই উপায় বের হবে ।
আপনি যদি বিয়ের পাশাপাশি পড়ালেখাও করেও তাও কিন্তু আপনার পক্ষে সম্ভবপর হয়ে দাঁড়াবে । সুতরাং আগে বিয়ে তারপর পড়ালেখা।
আশা করি উত্তর পাওয়া গিয়েছে😇
No comments